শনিবার ২১ সেপ্টেম্বর, ২০২৪ খ্রিস্টাব্দ | ৬ আশ্বিন, ১৪৩১ বঙ্গাব্দ

>>

মুঘল-ই-আজম ও নায়িকা মধুবালা

  |   শুক্রবার, ২৪ ফেব্রুয়ারি ২০২৩   |   প্রিন্ট

মুঘল-ই-আজম ও নায়িকা মধুবালা

নূরুদ্দীন দরজী:
সুহৃদ পাঠকগণকে “হামেনাকাশ তুমছে মহব্বত না হতি/কাহানী হামারী হকীকত না হতি” হৃদয় নিংরানো বিখ্যাত হিন্দি গানের সুরে ভাসিয়ে লেখাটি শুরু করছি। সিনেমা নাটকে আমরা যে অভিনয় দেখি তাতে বাস্তব জীবনের প্রতিফলন ঘটে। মানুষের জীবনের ঘটনাবলী ফুটিয়ে তোলাই অভিনয় কলার কাজ। এ ভবের নাট্যশালায় মনুষ্য জীবন বিন্যাস এক একটি অভিনয় । আজকে আলোচনা এমন একজন অভিনয় শিল্পীকে নিয়ে যার ব্যক্তিগত জীবন ও অভিনিত সিনেমার কাহিনীতে ছন্দোবদ্ধ মিল লক্ষ্য করা যায়। বহুল আলোচিত,সর্বকালের সুপারহিট ও ব্যবসা সফল হিন্দি সিনেমার নাম ” মুগল- ই- আজম”। মুক্তি পেয়েছিলো ১৯৬০ সালে। প্রধান নায়িকা চরিত্রে অভিনয় করেছেন কিংবদন্তি অভিনেত্রী মধুবালা। নায়ক আরেক প্রখ্যাত কিংবদন্তি দিলীপকুমার। সম্রাট আকবর চরিত্রে হিন্দি সিনেমার অগ্ৰদূত পৃথ্বীরাজ কাপুর। সে সময়ে ছবিটি ছিলো সবচেয়ে ব্যয়বহুল। ছবির” পিয়্যার কিয়া তো ডরনা কিয়া,” গানের দৃশ্যটি চিত্রায়িত করতে ব্যয় হয়েছিলো তখনকার সময়ে ১৫ লক্ষ্য টাকা যা বর্তমানের শত শত কোটি টাকার সমতুল্য। ছবির জন্য প্রয়োজন হয়েছিলো ১০০০ নৃত্যশিল্পী, ৪০০০ হাতি ঘোড়া ও ৮০০০ ভারতীয় সৈন্য। কে আসিফ পরিচালিত ছবি নির্মাণে ব্যয় হয়েছিলো ১৫ মিলিয়ন টাকা যার বিপরীতে আয় হয়েছিলো ৫৫ মিলিয়ন টাকা। ছবিতে লতা মঙ্গেশকরের ১২ টি গান রয়েছে আজ ও যেগুলো পৃথিবীর সর্বত্র মানুষের হৃদয় ছুঁয়ে যায়। ছবিটি ছিলো সাদাকালো। ২০০৪ সালে রঙীন করে আবার মুক্তি দেওয়া হলে ও ব্যবসা সফল হয়। ভারতীয় সিনেমা জগতে “মুঘল-ই- আজম” ই সময় ও অর্থের তুলনামূলক মূল্যায়ন বিশ্লেষণে সর্বাপেক্ষা ব্যয়ে নির্মিত সিনেমা। অতি সম্প্রতি ” বাহুবলী” নামের ছবির ব্যয় ও ব্যবসা বেশি জানা যায়।
সিনেমার কাহিনী বিন্যাসে পাক ভারত উপমহাদেশের এককালের দুদন্ড প্রভাবশালী সম্রাট আকবরের ছেলে শাহজাদা সেলিমের সাথে বাদী আনারকলির প্রেম মারাত্মক ট্রাজেডি রুপ পায়।
আনারকলির একটি অনু ইতিহাস থাকলে ও সেলিম ও আনারকলির প্রেম ছিলো সম্রাটের বিচারে একেবারেই অসম। কোনভাবেই তাঁদের প্রেম মেনে নেওয়া হয়নি। বাধঁ না মানা অন্ধ প্রেম হতে তাঁদের নিবৃত্ত না করতে পারায় উপায়ান্তর না দেখে জেদি সম্রাট আকবর আনারকলিকে জীবন্ত কবর দিতে আদেশ করেন। এভাবেই “মুগল- ই-আজম, সিনেমার কাহিনী দারুন পরিনতি পায়। এ সিনেমার হৃদয়ে ক্ষত সৃষ্টি কারী। ট্রাজেডির করুন কাহিনী শ্রোতা- দর্শকদের মনে নিদারুন রেখাপাত করে।
অন্য দিকে নায়িকা মধুবালার জীবন কাহিনী সিনেমার ঘটনার সাথে মিলে যায়। তাঁর নাম ছিলো মমতাজ জাহান বেগম দেহলভী। ১৯৩৩ সালে পিতা আতাউল্লাহ খানের দরিদ্র পরিবারে জন্ম। বাবা পেশোয়ারী হলে ও ভাগ্যের অন্বেষণে ভারতে চলে আসেন। কষ্টে পরা পরিবারের আয় উপার্জনের জন্য মেয়ে অভিনয় জগতে নাম লেখায়। অভিনেত্রী দেবিকা রাণী সিনেমায় তাঁর নাম দেন মধুবালা। ১৪ বছর বয়সে” নীলকমল” নামক ছবির মাধ্যমে অভিনয় শুরু করেন মধুবালা। মাত্র ২৯ বছর জীবনে ৭০টি সিনেমায় অভিনয় করেন । তাঁর অভিনয় জীবনের সেরা ছবি ” মুগল- ই- আজম। এ ছবির কাহিনী তাঁর জীবন কাহিনীর সাথে মিলে গিয়ে দর্শক হৃদয় মনে আজ ও দ্বৈত বেদনার পাহাড় সৃষ্টি করে আছে
সিনেমার কাহিনীর সাথে মধুবালার জীবন চিত্র মিলের দিকগুলোর হচ্ছে- চরিত্র আনারকলি অর্থ ডালিম কলি, আর মধুবালা অর্থ মিষ্টি বালিকা। আনারকলি ছিলেন অন্যতম শ্রেষ্ঠ সুন্দরী আর মধুবালা ও ছিলেন তৎ সময়ের সেরা সুন্দরী। মনের অজান্তে আনারকলি ভালোবেসে ফেলেন শাহজাদা সেলিমকে যা সম্রাট ” আকবর দি গ্ৰেট ” কোনভাবেই মেনে নেননি। মধুবালার জন্ম হয়েছে ১৪ ফেব্রুয়ারিতে ভালোবাসা দিবসে। তাই বুঝি তাঁর প্রতি ভালোবাসার হাত বাড়িয়ে দিয়েছিলেন বিশ্বের নামীদামী অনেকে। যদি ও মধুবালা বাস্তবে ভালোবেসে ফেলেন একমাত্র সেলিম রুপী নায়ক দিলীপকুমারকে অভিনয় স্যাটে। মধুবালার বাবা আতাউল্লাহ খান তা মেনে নিতে রাজি হয়নি। মুঘল-ই- আজম,অর্থ শক্তিশালী মুঘল সম্রাট। অন্যদিকে মধুবালার পরিবারে একচ্ছত্র অধিপতি ছিলো তাঁর বাবা। বাবার বিরুদ্ধে যাওয়ার সাধ্য কার ও ছিলো না। দিলীপকুমার মধুবালাকে জীবনসঙ্গী করতে রাজী হলে ও আতাউল্লাহ খানের ব্যবহার ও শর্তের কারণে বিরহ কাতর মনে পিছিয়ে যান । পরে এক সময় মধুবালা কিশোরকুমারকে বিয়ে করেন। কিন্ত তাঁর মন পড়ে ছিলো দিলীপের জন্য। শয়নে স্বপনে শুধুই ছিলো দিলীপ। আনারকলি যেমন অল্প বয়সে পৃথিবীর মায়া ত্যাগ করে চলে গেছে ঠিক তেমনি মধুবালার জীবন প্রদীপ নিভে যায় মাত্র ৩৬ বছর বয়সে হার্ট এ্যাটাকে। অনেকের মতে পিতা আতাউল্লাহ খান মেয়ের অসুস্থতার কথা আগেই জানতেন। এ জন্য‌ই মেয়েকে বিয়ে দিয়ে নতুন করে সমস্যা সৃষ্টি করতে চাননি।
মধুবালা শারীরিক ও মানসিকভাবে অসুস্থ থেকে অনেক কষ্টে “মুঘল-ই আজম, ছবির‌ শুটিং চালিয়ে গেছেন। শুটিং স্যাটে বার বার মূর্ছা যেতেন। দিলীপ কুমারের বিরহ ব্যথা বুকে নিয়ে তাঁকে কাজ করতে হয়েছে। ছবির একটি গান ” মোহববত কি জুটি- কাহানীকা রয়ে/ বড়‌ই চোট খাইয়ি জোয়ানী পেরুয়ে” এর করুন সুরে সুরে মধুবালা দিলীপের জন্য মনে চোট ও ব্যথা নিয়ে ক্রমান্বয়ে মৃত্যুর রাজ্যে পাড়ি জমিয়েছেন। মধুবালার মৃত্যু হয় ১৯৬৯ সালে। এর কিছু দিন পর স্বেত পাথরে নির্মিত মধুবালার সমাধি পাশে গিয়ে পৃথ্বীরাজ কাপুর (সিনেমায় সম্রাট আকবর যিনি জীবন্ত কবরের আদেশদাতা) অঝোরে কেঁদেছিলেন । মধুবালার সমসাময়িক নায়িকারা ছিলেন মিনা কুমারী,নার্গিস প্রমুখ। হিন্দি সিনেমার যত সুপারহিট করুন গান তার অনেকগুলোই মধুবালার ঠোঁটে আজ ও মানুষকে নিয়ে যায় নস্টালজিয়ায়।
মধুবালা ” শিরি ফরহাদ” সিনেমায় গেয়েছেন,” গুজরা হুয়া জামানা/ আতা নেহী দোবারা/ হাফিজ খোদা তোমহারা”। ১৯৬৯ থেকে গুজার হয়েছে অনেক বছর, মধুবালার জীবন গুজার হয়ে গেছে। কিন্তু গুজার হয়নি কাহিনী,আছে জীবন্ত হয়ে, গেয়ে যাচ্ছেন, “পিয়্যার কিয়া তো ডর না ক্যায়া,। থেকে যাবে বহুদিন।
২৩ ফেব্রুয়ারি এ মহা নায়িকার মৃত্যু দিবসের স্মরণে- লেখকঃ সাবেক উপজেলা শিক্ষা অফিসার

Facebook Comments Box

Posted ৭:০৬ অপরাহ্ণ | শুক্রবার, ২৪ ফেব্রুয়ারি ২০২৩

dainikbanglarnabokantha.com |

এ বিভাগের সর্বাধিক পঠিত

কচু শাক চুরি
(798 বার পঠিত)
শূন্যতা
(612 বার পঠিত)
তোমাকেই বলছি
(545 বার পঠিত)
হেমন্ত
(421 বার পঠিত)
কাঁঠাল
(334 বার পঠিত)
বিজয় দিবস
(315 বার পঠিত)
শীত
(243 বার পঠিত)

সম্পাদক

রুমাজ্জল হোসেন রুবেল

বাণিজ্যিক কার্যালয় :

১৪, পুরানা পল্টন, দারুস সালাম আর্কেড, ১০ম তলা, রুম নং-১১-এ, ঢাকা-১০০০।

ফোন: ০১৭১২৮৪৫১৭৬, ০১৬১২-৮৪৫১৮৬

ই-মেইল: [email protected]

এই ওয়েবসাইটের কোনো লেখা, ছবি, অডিও, ভিডিও অনুমতি ছাড়া ব্যবহার বেআইনি।

design and development by : webnewsdesign.com

nilüfer escort coin master free spins